হাসপাতালের দিনরাত
-সঞ্জিত মন্ডল
এখানে কারোর প্রবেশাধিকার নেই
বন্ধ কাঁচের জানালায় রোদ কাঁদে-
বহু দূরেদূরে গাছপালাগুলো নড়ে,
বাইরে বাতাস বইছে তা বোঝা যায়।
আমি কোনো এক অজানা দ্বীপেতে একা
নিজভূমে পরবাসী হয়ে পড়ে আছি।
ঘুম হয় নাকো তাই একা জেগে থাকা
ভোরের আগেই রাত ভোর হয় দেখি।
শব্দ নেইকো লোক চলাচলও নেই,
গম্ভীর ডাক্তার আর নার্সদিদিরাই দেখে
পরীক্ষা নীরিক্ষা কারা করে চলে যায়,
কথা কম বলে কাজ বেশি করে দেখি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাটে দিনরাত,
ক্লান্তিহীন পরিশ্রমেও পরিসেবা মুখ বুঁজে,
ওরাও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে খেটে যায়।
এদিকে আমার মনে ঝড় বয়ে যায়,
মাঝে মাঝেই ব্রহ্মতালুটা ফেটে যাবে মনে হয়।
খিদে মরে গেছে, জ্বর ওঠে জ্বর নামে,
অক্সিজেনের লেভেলটা কমে যায়।
ব্লাড সুগারের অবস্থা ভালো নয়,
চারশো আশিতে উঠে বসে আছে সে,
ইন্সুলিনটা রোজ ওরা দিয়ে যায়।
ব্লাড প্রেসারটা তবুও সঠিক আছে,
হঠাৎ কিছুই হবে না অভয় দেয়।
বিধাতাকে ডেকে বলি হে মঙ্গলময়
যদি নিতে হয় নিজে এসে রেখো পায়।
ছোট বেলাকার কবিতাটা মনে পড়ে-
Who has seen the Wind neither you nor I
But when the Trees are blowing the wind is passing by.
তবুও তো মনে হয়, একটু বাতাস লাগুক আমার গায়।
মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ বোঝা যায়।
হয়তো বাইরে সংগীত ধ্বনি বাজে
বন্ধ দুয়ারে সংগীত ফিরে যায়।
আরও কতো কিছু আবোল তাবোল ভাবি,
শরীরে কষ্ট আছে তাই মন বড়ো কাঁদে
ব্যথা যন্ত্রণা মাঝে মাঝেই কাঁদায়।
কবি যখন হাসপাতালে একলা শুয়ে হায়
ঘুম আসে কি কষ্ট রাতে ফুলের বিছানায়।
স্বাধীনতা নেই, পুরোপুরি এক বন্ধ বন্দীশালা-
কষ্ট করেও এখানে বাঁচাটা দায়
রুচি নেই মুখে খাবার কি তোলা যায়
দাসত্ব শৃঙ্খলে বদ্ধ করেছে যেন আমায়।
জীবন ভরেই প্রতিবাদী কবি বংশ পরম্পরায় কলম স্তব্ধ হবে কি এবার হাসপাতালের কারায়।
ঝর্ণার মতো বইবে কলম আকাশের মতো মুক্ত
ধরণীর ধূলোমাটি ভালোবাসি তাই অভিমানে হই সিক্ত।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবনা
এদের জগতে অন্য হিসেব কেউ আপন কেউ পর না।
মুক্ত দুনিয়া দেখে যেতে চাই ভাইরাস ভয় মুক্ত
মঙ্গল করো হে প্রভু আমার ভয় করো অবলুপ্ত।
জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণা ধারাই চাই
তোমার যজ্ঞে আহুতি দেওয়ার পূর্ণতা দেখে যাই।।
Alapimon কে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই